সহকারী কমিশনার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মধ্যে পার্থক্য
|| ম্যাজিস্ট্রেট বনাম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ||
“সহকারী কমিশনার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মধ্যে পার্থক্য
অজ্ঞতা না-কি পাওয়ার এক্সারসাইজ করার প্রবণতা?
প্রতিবছর বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হবার পর অথবা গেজেট প্রকাশিত হবার মোটামুটি সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পোস্ট দেন; যেখানে নিজেদের “সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট” বলে পরিচয় দেন।
৪৩তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশিত হবার পরেও প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারের বেশিরভাগই নিজেদের ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
আসলেই কি তারা এই পরিচয় বহন করতে পারেন? বা তাদের কি এমন পরিচয় দেবার অধিকার রয়েছে?
বিসিএসে ম্যাজিস্ট্রেট নামে আদৌ কি কোনো ক্যাডার রয়েছে? বা ম্যাজিস্ট্রেট/নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নামে বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারে কোনো পদ রয়েছে?
প্রকৃত সত্য হচ্ছে বিসিএসে ‘ম্যাজিস্ট্রেট/নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’ নামে আদতে কোনো ক্যাডার বা পদ নেই।
এবং যারা প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একজন স্টাফ অফিসার হিসেবে যোগদান করবেন; যেখানে দক্ষতা অনুযায়ী প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
এবং দুই বছর পর চাকরি স্থায়ী হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হয়ে সহকারী কমিশনার(ভূমি) বা এসি ল্যান্ড পদে অধিষ্ঠিত হবেন।
আসলে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ তাদের মূল পদ নয়। তাদের পদবী সহকারী কমিশনার(প্রশাসন)। ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নয়।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ১০(৫) অনুযায়ী, সরকার চাইলে বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে পারেন।
তখন তাদেরকে বলা হবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর বাইরে তিনি প্রশাসনের একজন সহকারী কমিশনার; যার মূল কাজ হবে প্রশাসনিক।
অন্যদিকে, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ৪ক.১(ক)-তে স্পষ্ট করে বলা আছে; যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট বলতে শুধুমাত্র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকেই বোঝাবে।
যদি কেউ নিজেকে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে পরিচয় দেয় তাহলে বুঝতে হবে তিনি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা, অর্থাৎ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারকার্য পরিচালনা করার এখতিয়ার নেই। তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ক্ষেত্রবিশেষে ভ্রাম্যমাণ আদালত(মোবাইল কোর্ট)-এর মাধ্যমে তাদের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন; যেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধের বিচার করতে পারেন।
তবে তাদের এই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সীমিত আকারে দেয়া হয়। এটা একটা ডেলিগেইটেড ডিউটি; অর্থাৎ অর্পিত দায়িত্ব।
যতক্ষণ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন। এর বাইরে তিনি ডিসি অফিসের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
তাছাড়া একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বেতনস্কেল সিভিল সার্ভিসের একজন সহকারী কমিশনারের থেকে ঢের বেশি।
সিভিল সার্ভিসের এন্ট্রি লেভেলের একজন কর্মকর্তা বেতন পান নবম গ্রেডে; যেখানে মূল বেতন ধরা হয়েছে ২২,০০০।
অন্যদিকে, জুডিসিয়াল সার্ভিসের এন্ট্রি লেভেলের একজন কর্মকর্তা, অর্থাৎ সহকারী জজ/জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মূল বেতন ৩০,৯৩৫ টাকা। তাই কেউ নিজকে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ বলে পরিচয় দিলে সেটা শুধুমাত্র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকেই বোঝাবে।
একটি জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা প্রশাসক এই দায়িত্ব পালন করেন। আমরা কিন্তু তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বলছি না বা তিনি নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন-ও না।
তাছাড়া আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত অফিসাররগণ বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেয়েছেন দুই মাসের জন্য; যেখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭টি ধারায় তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। আমরা কিন্তু তাঁদেরকে কখনো ম্যাজিস্ট্রেট বলিনি এবং বলি-ও না।।
তাছাড়া বিসিএস(শিক্ষা) ক্যাডারের শিক্ষকগণ-ও কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেতে পারেন। আমরা কিন্তু তাঁদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট বলে সম্বোধন করি না।
তাহলে প্রশাসনের একজন অফিসারকে কেন ম্যাজিস্ট্রেট বলতে হবে বা তিনি নিজেকে কেন ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দিবেন? ২৪/৭ ম্যাজিস্ট্রেট তো বিচার বিভাগের একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
তাই বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আমাদের বলা উচিত সহকারী কমিশনার।
কারণ ‘ম্যাজিস্ট্রেসি’ ক্ষমতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি দায়িত্ব; যেটা সরকার কর্তৃক ডেলিগেইটেড হয়।
সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিজেদের ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ বলার আগে একবার ভাবা উচিত যে, আপনি নিজেকে জুডিসিয়াল সার্ভিসের একজন বিচারক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন না তো!
এটা কিন্তু জনগণের সাথে এক ধরনের প্রতারণা এবং ক্ষমতা দেখানোর একটা প্রবণতা।
“সহকারী কমিশনার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট” এই ধরনের পরিচয় দেয়াটা অজ্ঞতার শামিল।
কারণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নামে সিভিল সার্ভিসে কোনো পদ নেই। তাদের পদবী হবে শুধুমাত্র ‘সহকারী কমিশনার(প্রশাসন)’।
✍️ দিদারুল জিদান
চাকরির প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
বিসিএস প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
চাকরি বিজ্ঞাপন দেখতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
চাকরির ভাইভা প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
চাকরির প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
পরিক্ষার প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন PDF এবং অন্যান্য বিষয়ের আপডেট জানতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন: ক্লিক করুন
অথবা ফেসবুক পেজে লাইক দিন – ক্লিক করুন