বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব 2024
বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব
বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতির স্ট্রাটেজি:
গতানুগতিক স্টাইলে বিসিএস প্রস্তুতি নিলে আপনার উপর অতিরিক্ত প্রেশার হয়ে যাবে। মনে হবে বিসিএস প্রস্তুতি একটা মহাসমুদ্র। আমি এখানে বলবো না যে, আপনি কী কী বিসিএস এর জন্য পড়বেন। আমি বলবো আপনি কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন। তার জন্য নিচের স্টেপগুলো ফলো করুন।
স্টেপ-১
সবার আগে ঠিক করেন, আপনি কী ভালো পারেন আর কী পারেন না৷ মানে আপনার স্ট্রং জোন এবং উইক জোন। যেমন ধরুন, আপনি ভালো ম্যাথ পারেন। এটা আপনার স্ট্রং জোন। তেমনি আপনি ইংরেজিতে ভালো না। এটা আপনার উইক জোন। তো প্রথমেই আপনার স্ট্রং জোন ও উইক জোন সেপারেট করে ফেলুন। আবার কিছু জিনিস আছে যেটা আপনার মাঝামাঝি, সেটা মাঝামাঝিই রাখুন।
তাহলে আপনার হাতে ৩ টা ক্যাটাগরি হয়ে গেল।
১. স্ট্রং জোন (যেমন: বাংলা, বাংলাদেশ)
২. উইক জোন (যেমন: ম্যাথ, কম্পিউটার)
৩. মাঝামাঝি (যেমন: ইংরেজি, আন্তর্জাতিক)
প্রথম ধাপের কাজ শেষ।
স্টেপ-২
এই ধাপে আপনার কাজ উইক জোনের কিছু টপিক আছে যা আপনি পারেন। সেগুলো বাছাই করা। যেমন, ম্যাথের বীজগণিত কিছুটা পারেন বা বোঝেন। পাটিগণিত অতো বোঝেন না বা পারেন না। এই ভাবে উইক জোনের যে টপিক গুলো পারেন বা পারবেন সেগুলো আলাদা করে ফেলা। একই সাথে যেই টপিক গুলো চেষ্টা করলেও পারবেন না বা পারলেও অনেক সময় লাগবে সেগুলো আলাদা করে ফেলেন। বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব
একই ভাবে মাঝামাঝি জোনের কিছু বিষয় আপনি নাও পারতে পারেন। তবে তার লেভেলটা বিশ্লেষণ করতে হবে, যেটা সেটা চেষ্টা করলে পারা যাবে নাকি না? যেমন ভূগোলের কিছু টপিক অনেকের মাথায় আসে না।
যাইহোক, এই ধাপের ও কাজ শেষ। এবার টোটাল ধাপের সামারি করে ফেলেন।
এই কাজটি একটু সময় নিয়ে করতে হবে। ধীর স্থির ভাবে। যত সময় দিয়ে এটি করবেন, ততো ফ্রুটফুল হবে এটা।
স্টেপ -৩ বা স্ট্রাটেজিক স্টেপ:
আপনাকে এখন কী পড়তে হবে, আপনি কিন্তু বের করে ফেলেছেন। যেমন, আপনার স্ট্রং জোনে সব থেকে বেশি সময় দিবেন। আপনি মনে করতে পারেন, আমিতো এটা সব চেয়ে ভালো পারি, তাহলে এটাতে সময় দিবো কেনো? যেটা না পারি, সেটাতে সময় দিবো। কিন্তু আসলে এখানেই ভুলটা হয়। স্ট্রাটেজিটা হচ্ছে, যেটা সব চেয়ে ভালো পারেন, সেখানে সব চেয়ে বেশি সময় দিবেন। যেটা সব চেয়ে কম পারেন, সেখানে সবচেয়ে কম সময় দিবেন বা মোটেও দিবেন না। অবাক লাগছে? আসেন, হিসাব মিলিয়ে দেই।
ধরেন, আপনি বাংলা আর বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো পারেন, আপনার টার্গেট করতে হবে এই ৬৫ থেকে আপনাকে ৬০ পেতেই হবে। যেহেতু এটা সবচেয়ে ভালো পারেন, তাই এর পিছনে একটা বেশি সময় দিলে বা সলিড প্রিপারেশন নিলে সহজেই আপনি পারবেন। তাছাড়া এটা যেহেতু আপনার স্ট্রং জোন, তাই আপনি নিজেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
কিন্তু সেইম ইফোর্ট যদি আপনি যেই টপিক পারেন না বা কঠিন, তার পিছনে দেন, দেখবেন পড়াশোনা ওখানেই শেষ। আর মাক্সিমাম সবাই এটা করতে যেয়ে তাদের প্রস্তুতি কঠিন ও নীরস করে ফেলে।
দেখেন আপনি আপনার স্ট্রং জোন থেকে ৬৫ তে যদি ৬০ কাভার করেন, তাহলে ১২০ পেতে আপনার আর মাত্র ৬০ লাগবে যা আপনি বাকি ১৩৫ থেকে প্রস্তুতি নিবেন। দেখেন বাকি ৬০ পাওয়ার জন্য অন্য বিষয়গুলো আপনাকে ৫০% ও পড়তে হবে না। আর এভাবেই আপনার প্রস্তুতি সহজ করে নিবেন।
তাহলে আসেন, হিসাবটা শেষ করি।
√ স্ট্রং জোনে ফুল ইফোর্ট। যার স্ট্রং জোন যত বেশি, তার জন্য প্রস্তুতি সবচেয়ে সহজ। এখানে টার্গেট করতে হবে পুরো ১০০%। এর জন্য যত ধরনের ম্যাটেরিয়ালস আছে, সব কালেক্ট করে পড়বেন।
√ মাঝামাঝি জোনে যা আছে, তা যদি আপনি চেষ্টা করেন, তাহলে কাভার করতে পারবেন। যেমন ধরেন, মাঝামাঝি জোনে আছে আন্তর্জাতিক ও মেন্টাল এবিলিটি বা ভূগোল ইত্যাদি। তাহলে এখানে আপনার ইফোর্ট হবে ৯০% কাভারেজ। যেহেতু কিছু টপিক আপনার ভালো লাগবে না বা পারবেন না বা আনকমন থাকবে, তাই সেগুলো বাদ যাবে।
√ সর্বশেষে উইক জোন, যেটা আপনি সব চেয়ে ভয় পান। এই উইক জোনে কিছু টপিক আছে যা আপনি একটু চেষ্টা করলেই পারবেন। সেগুলোর প্রস্তুতি প্লান মাফিক শুরু করুন। রিভিশন দিন, প্রাকটিস করুন।
যেমন ধরেন ম্যাথের কিছু চ্যাপ্টার, কম্পিউটারের কিছু অধ্যায় বা ইংরেজির কিছু টপিক। যেগুলো মনে হবে চেষ্টা করলেও পারবেন না। একেবারে বাদ দিয়ে দেন। সময় নষ্ট করা যাবে না। এভাবে এই জোন থেকে ৬০% এর মত প্রস্তুতি নিন।
লাস্ট স্টেপ বা স্টাডি স্টেপ:-
মোটামুটি আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে নিয়েছেন। এবার প্রথমে যে কোন সিরিজের ১ সেট বই কিনে ফেলুন। যেমন, ধরেন mp3 সিরিজ। এবং মিনিমাম বিগত ১০ বছরের সমাধান সহ প্রশ্ন ব্যাংক কালেক্ট করে ফেলুন। ধরেন mp3 দিয়েই শুরু করলেন। শুরুতে সব বিষয়ের উপর একটা হালকা প্রস্তুতি নিবেন। যেমন ধরেন, আন্তর্জাতিক প্রস্তুতিতে প্রথমে চ্যাপ্টার ধরে পড়া শুরু করলেন। লিটারেচার দাগিয়ে পড়বেন। যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে দাগ দিবেন। বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব
তারপর তার অনুশীলন এ এসে নিজে নিজে উত্তর করার চেষ্টা করবেন। না পাড়লে উত্তর দেখবেন। কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে অন্য সোর্স দেখবেন। এভাবে বই শেষ করবেন। তবে এই প্রথম রিভিশনে সব কিছু মনে রাখার চেষ্টা করবেন না।
এর মাধ্যমে বই সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন। এরপর ঐ বিষয়ের কিছু বছরের প্রশ্ন সমাধানের চেষ্টা করবেন। না পারলে উত্তর দেখবেন। আমার সাজেশন ১০ বছরের প্রশ্ন ব্যাংক রাখবেন।
এর মাধ্যমে আপনার কী কী উপকার হলো, আসেন বিশ্লেষণ করি।
১. বই শেষ করার ফলে বিষয় সম্পর্কে একটা ধারণা পেলেন। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক এ কী কী পড়তে হবে। বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব
২. ১০ বছরের এর প্রশ্ন দেখার ফলে কোন কোন টপিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আপনি বুঝে যাবেন। আর কোনগুলো অতিরিক্ত, সেটাও বুঝে যাবেন। কারণ, আমাদের বাজারের বইগুলোতে বা কোচিং সেন্টারগুলোতে অযথা হাবাযাবা দিয়ে ভরে রাখে। সেই বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা হবে। ফলে অতিরিক্ত বিষয়গুলোকে সাইডে রেখে পড়তে পারবেন।
৩. আগেই বিভিন্ন জোনের হিসাব বের করে রেখেছেন। এখন আবার বের করলেন, বই অতিরিক্ত কী কী পড়তে হবে না। ব্যাস, আপনার বিসিএস সিলেবাস সহজ হয়ে গেলো। ২/৩ মাসের কমপ্যাক্ট প্রস্তুতি তে এটা ইজিলি কাভার করতে পারবেন।
কিছু সাইকোলজিক্যাল কথা বলি। এটাই স্ট্রাটেজির অংশ…
সব বিষয়ের এভাবে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে ফুল প্রস্তুতি শুরু করে দিবেন। প্রথমে সব বিষয়ের একটা হালকা প্রস্তুতি থাকার কারণে কিছু লাভ হবে। যেমন, অজানা বিষয় প্রথমেই গিলতে গেলে আমাদের ব্রেইনে প্রেশার পড়ে। ফলে কিছুক্ষণ পর আপনি আর পড়াশোনায় মনোযোগী থাকতে পারবেন না। আপনি টায়ার্ড হয়ে যাবেন। এবং পড়াশোনা থেকে আপনার মন উঠে যাবে। বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব
তাই হালকা একটা প্রস্তুতি নিলে মাথায় বা ব্রেইনে তেমন প্রেশার পড়বে না। দ্রুত বই শেষ করতে পারবেন। মোস্ট ইফেক্টিভ হচ্ছে, দ্বিতীয় বার যখন আপনি ফাইনাল প্রস্তুতি নিবেন বা আরো রিভিশন দিবেন, তখন আপনার কাছে আননোন বা অজানা কোন টপিক থাকবে না। ফলে ব্রেইনের নিতেও তেমন প্রেশার হবে না।
যেহেতু আপনার সব বিষয়ে একটা হালকা ধারণা আছে, তাই এবারও আপনি দ্রুত সব শেষ করতে পারবেন।
কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন।
√ কোন বিষয় পড়তে ভালো না লাগলে ওটা ওভাবেই রেখে দিন। অন্য বিষয় শুরু করুন বা মনে যেই বিষয় পড়তে শায় দেয়, সেটাই শুরু করুন। কোন ভাবেই ব্রেইনে প্রেশার দিয়ে পড়া যাবে না।
√ প্রতিটা সাবজেক্ট বা বিষয় পড়ার আগে তার প্রতি আগ্রহ তৈরি করুন বা তার গুরুত্ব সেট করুন। জানার আগ্রহ তৈরি করুন। সেটা যে যেভাবেই পারেন। যেমন ধরেন, সংবিধান পড়ার আগে এভাবে নিজেকে মোটিভেট করুন যে আমি একজন সিভিল সার্ভেন্ট হতে যাচ্ছি। বা একজন নাগরিক হিসাবেও এটা আমার জানার দরকার।
দেখি কী কী বলে এই সংবিধান। এভাবে যার যার ওয়ে তে শুরু করুন। দেখবেন তখন কোন টপিকই বরিং লাগবে না।
√ বন্ধুদের সাথে বা যারা একসাথে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের সাথে আপনার আন্ডারস্ট্যান্ডিং গুলো আলোচনা করুন। বা আপনি নতুন কী জানেন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। এটা খুবই ইফেক্টিভ।
√ সকালের দিকে এনালাইটিক ও বিকালে বা রাতে মুখস্থ টাইপ জিনিস দেখুন। বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করব
√ ডোন্ট টেক বিসিএস সিরিয়াসলি। রিল্যাক্স করুন। আবার পড়ুন। একট গেমস খেলুন। একটু আড্ডা দিন। বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরে আসুন। ফান করুন। নামাজ রোজা আদায় করুন।
অর্থাৎ, টোটালি রিল্যাক্স থাকুন। দেখবেন, ইনশাআল্লাহ কোন আবেগ ছাড়াই অল্প সময়ে সব কিছু ঠিক রেখে প্রেশারমুক্ত হয়ে একটা সলিড প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।
সর্বশেষ, বিসিএস একটা এক্সাম বা পরীক্ষা।
জীবন বা যৌবন সব এটাই না। তাই এটাকে ঐ ভাবেই দেখুন। আপনার ক্যাপাসিটি ও স্ট্রাটেজি অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।
সবার জন্য দোয়া রইলো। আমিও দোয়া প্রার্থী।
মাহমুদ হাসান
সহকারী মহা হিসাবরক্ষক,
বিসিএস অডিট এন্ড একাউন্টস
অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়।
চাকরির প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
বিসিএস প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
চাকরি বিজ্ঞাপন দেখতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
চাকরির ভাইভা প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
চাকরির প্রস্তুতি নিতে ভিজিট করুন: ক্লিক করুন
পরিক্ষার প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন PDF এবং অন্যান্য বিষয়ের আপডেট জানতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন: ক্লিক করুন
অথবা ফেসবুক পেজে লাইক দিন – ক্লিক করুন